ঢাকা ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়কন্যাখ্যাত জেলা বান্দরবান

আজকের তরুণকণ্ঠ

আবুবকর সিদ্দিক, বান্দরবান

তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম বান্দরবান। এখানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মেঘের পরশ। চঞ্চলা ঝরনার অবিরাম ছুটে চলা আর শ্যামল প্রকৃতি—সব মিলিয়ে এ যেন এক টুকরো স্বর্গ। এখানকার সর্বত্রই রয়েছে দেখার মতো অসংখ্য স্থান।

নীলাচল: এই পর্যটন কেন্দ্রটি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২,০০০ ফুট। ঘুরে দেখা যাবে, নীলাচলের বাইরের দিকটা বিচ্ছিন্ন পাহাড় দ্বারা সজ্জিত হলেও ভেতরটা খুবই শান্ত ও প্রশান্ত। কোথাও দিগন্তজোড়া ঢালে আঁকাবাঁকা রাস্তা, পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাড়া, আর তার সঙ্গে রূপালি ঝরনা-ঝিরি—সব মিলিয়ে এ যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। মেঘমুক্ত আকাশে এই নীলাচল থেকেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বা চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা। শহর ছেড়ে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার গেলে হাতের বাঁ দিকের ছোট্ট সড়কটিই নীলাচলের প্রবেশপথ। এই পথে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ে উঠলেই মিলবে বান্দরবান জেলা প্রশাসন পরিচালিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র।

বগা লেক: রুমা বাজার থেকে ১৫ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় গাঢ় নীল জলের এই লেকে। ১৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু এই লেকের অপার সৌন্দর্য দেখে পথের ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে যায়। এখানে রাত কাটানোর সুব্যবস্থা আছে।

তিন্দু: তিন্দুর পাশ দিয়ে পাহাড়ি নদী সাঙ্গু বয়ে যাওয়ায় এখানে মেঘ, নদী, জলপ্রপাত, রহস্য ও রোমাঞ্চের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে। তাই রোমাঞ্চপ্রিয় ভ্রমণকারীদের জন্য তিন্দু অন্যতম আকর্ষণ। বান্দরবান থেকে থানচি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথের মনোরম প্রকৃতি দেখতে দেখতে চোখ ও মন সতেজ হয়ে যায়। থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করে প্রায় দুই ঘণ্টায় তিন্দু পৌঁছানো যায়। এই যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর মনোমুগ্ধকর রূপ উপভোগ করা যায়।

কেওক্রাডং: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,১৭১ ফুট উঁচু এই পর্বতটি রুমা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ছোট-বড় পাহাড়-পর্বতের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দুর্গম এলাকা। কেওক্রাডং বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। সবুজ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য, শীতল ঝরনা, আঁকাবাঁকা পথ এবং পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের লুকোচুরি খেলা—এই সবকিছু মিলে মনে নেশা ধরিয়ে দেবে। রুমা থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে মুনলাই বমপাড়া নামে একটি সুন্দর গ্রাম রয়েছে। এই সড়কে বগা লেকের পর দার্জিলিংপাড়া নামে আরও একটি বম নৃগোষ্ঠীর গ্রাম আছে, যেটি দেখার মতো সুন্দর। অনেক পর্যটক যাত্রাবিরতি দিয়ে এই অপূর্ব গ্রামটিতে বিশ্রাম নেন।

নাফাখুম: ‘খুম’ শব্দের অর্থ জলপ্রপাত। নাফাখুম বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম জলপ্রপাত। স্থানীয়রা একে রেমাক্রি জলপ্রপাত নামেও ডাকে। অনেকে একে ‘বাংলার নায়াগ্রা’ বলে থাকেন। সাঙ্গু নদী থেকে নৌকা নিয়ে রেমাক্রি হয়ে নাফাখুমে যেতে হয়। এই যাত্রাপথে তিন্দু, রাজাপাথর এবং পদ্মঝিরিও দেখে নেওয়া যায়। বর্ষাকালে নদীতে স্রোত বেশি থাকায় নাফাখুম যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, শীতকালে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নৌকা চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বর্ষার পর এবং শীতের আগে, অর্থাৎ শরৎকালই নাফাখুম ভ্রমণের সেরা সময়।

প্রান্তিক লেক: বান্দরবান শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের পাশেই এই অপূর্ব লেকটি অবস্থিত। বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে এখানে যেতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

লামা: বান্দরবান শহর থেকে ৯৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থানটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মণ্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মেডিটেশন সেন্টারের জন্য জায়গাটি সুপরিচিত। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে মিকির ও মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটন স্পট এবং সেনাবাহিনী নির্মিত শিশুপার্ক।

নীলগিরি রিসোর্ট: এটি বাংলাদেশের অন্যতম উঁচু পর্বতশৃঙ্গ এবং বান্দরবানের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,০০০ ফুট উঁচুতে এর অবস্থান। নীলগিরির পুরো এলাকা মেঘে ঢাকা থাকায় পর্যটকরা একে ‘মেঘের রাজ্য’ বলেন। এখানকার সূর্যোদয়ের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর এবং কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় প্রায় সব মৌসুমেই এখানে শীতের আমেজ পাওয়া যায়। এই পর্যটন কেন্দ্রটি যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করতে পারে। এখানের মনোরম হেলিপ্যাডটি নীলগিরির অন্যতম আকর্ষণ। পর্যটন এলাকাটির রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

আলী সুড়ঙ্গ: লামা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রহস্যঘেরা এই সুড়ঙ্গে যাওয়ার একমাত্র বাহন চাঁদের গাড়ি। তবে এখানে যাওয়ার আগে পাহাড় ভ্রমণের উপযোগী জুতা, দা, লাঠি, ব্লিচিং পাউডার ও লবণ সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।

নাইক্ষ্যংছড়ি: সীমান্তঘেঁষা এই উপজেলা শহরে রয়েছে জারুলিয়াছড়ি ও নাইক্ষ্যংছড়ি লেক, বিজিবির দপ্তর, উপবন পর্যটন কেন্দ্র এবং ৬৫ হেক্টর জমির ওপর স্থাপিত গয়াল প্রজনন কেন্দ্র।

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স: শহরতলি থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে ৯০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই পর্যটন কমপ্লেক্সটি। এখানকার কৃত্রিম লেক আর পাহাড়ের সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করবে।

চিম্বুক পাহাড়: শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পাহাড়টি বান্দরবানের অন্যতম চিত্তাকর্ষক স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,০০০ ফুট উঁচু এই পাহাড়ের চূড়া থেকে মেঘের সমুদ্র দেখা যায়।

রাজবাড়ি: বান্দরবানে অবস্থিত বহু বছরের পুরোনো বোমাং রাজার বাড়িটি আজও সবাইকে মুগ্ধ করে। প্রতিবছর শীতকালে এখানে রাজপুণ্যাহ মেলা বসে।

শৈলপ্রপাত: বান্দরবান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক সড়কপথে অবস্থিত শৈলপ্রপাতের অবিরাম জলধারা সবাইকে মুগ্ধ করে। এই পর্যটন কেন্দ্রটি দেখার মতো।

বৌদ্ধমন্দির: শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা সড়কের পুলপাড়ায় জাদি পাহাড়ের ওপর অপূর্ব কারুকার্যময় এই মন্দিরটির অবস্থান। আকর্ষণীয় এই স্বর্ণমন্দিরটির নাম বুদ্ধধাতু জাদি। এগুলো ছাড়াও বান্দরবানে দেখার মতো আরও আছে জাদি পাহাড়, রাজবন বিহার, শঙ্খ (সাঙ্গু) নদীসহ অনেক কিছু।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানের উদ্দেশে সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইম্পেরিয়াল, এস. আলম সার্ভিস, ইউনিক বাস সার্ভিস, ডলফিন সার্ভিস, সৌদিয়া পরিবহন এবং শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে। এ ছাড়া যেকোনো বাস বা ট্রেনে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকেও বান্দরবান যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাসগুলো ছাড়ে বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা পরপরই বান্দরবানের উদ্দেশে সাঙ্গু, মারসা, পূর্বাণী, পূরবী এবং পূবালী বাস ছেড়ে যায়। পৌঁছাতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা।

কোথায় থাকবেন
বান্দরবানে থাকার জন্য পর্যটন মোটেল একটি ভালো জায়গা। এখানে এসি ও নন-এসি দুই ধরনের কক্ষই পাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে ইকো সেন্স রিসোর্ট, গিরিরাজ রিসোর্ট, হোটেল গার্ডেন সিটি, হোটেল আরণ্যক, মেঘলা টুরিস্ট রিসোর্ট, হলিডে ইন রিসোর্ট, গ্রিন রিসোর্ট, হিল সাইড রিসোর্ট, হোটেল প্লাজা বান্দরবান, হোটেল পূরবী এবং হোটেল ফোর স্টারসহ আরও অনেক হোটেল ও রিসোর্ট।

Tag :

পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

প্রকাশ : ০৭:২১:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়কন্যাখ্যাত জেলা বান্দরবান

প্রকাশ : ০৭:২১:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

আবুবকর সিদ্দিক, বান্দরবান

তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম বান্দরবান। এখানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মেঘের পরশ। চঞ্চলা ঝরনার অবিরাম ছুটে চলা আর শ্যামল প্রকৃতি—সব মিলিয়ে এ যেন এক টুকরো স্বর্গ। এখানকার সর্বত্রই রয়েছে দেখার মতো অসংখ্য স্থান।

নীলাচল: এই পর্যটন কেন্দ্রটি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২,০০০ ফুট। ঘুরে দেখা যাবে, নীলাচলের বাইরের দিকটা বিচ্ছিন্ন পাহাড় দ্বারা সজ্জিত হলেও ভেতরটা খুবই শান্ত ও প্রশান্ত। কোথাও দিগন্তজোড়া ঢালে আঁকাবাঁকা রাস্তা, পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাড়া, আর তার সঙ্গে রূপালি ঝরনা-ঝিরি—সব মিলিয়ে এ যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। মেঘমুক্ত আকাশে এই নীলাচল থেকেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বা চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা। শহর ছেড়ে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার গেলে হাতের বাঁ দিকের ছোট্ট সড়কটিই নীলাচলের প্রবেশপথ। এই পথে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ে উঠলেই মিলবে বান্দরবান জেলা প্রশাসন পরিচালিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র।

বগা লেক: রুমা বাজার থেকে ১৫ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় গাঢ় নীল জলের এই লেকে। ১৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু এই লেকের অপার সৌন্দর্য দেখে পথের ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে যায়। এখানে রাত কাটানোর সুব্যবস্থা আছে।

তিন্দু: তিন্দুর পাশ দিয়ে পাহাড়ি নদী সাঙ্গু বয়ে যাওয়ায় এখানে মেঘ, নদী, জলপ্রপাত, রহস্য ও রোমাঞ্চের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে। তাই রোমাঞ্চপ্রিয় ভ্রমণকারীদের জন্য তিন্দু অন্যতম আকর্ষণ। বান্দরবান থেকে থানচি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথের মনোরম প্রকৃতি দেখতে দেখতে চোখ ও মন সতেজ হয়ে যায়। থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করে প্রায় দুই ঘণ্টায় তিন্দু পৌঁছানো যায়। এই যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর মনোমুগ্ধকর রূপ উপভোগ করা যায়।

কেওক্রাডং: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,১৭১ ফুট উঁচু এই পর্বতটি রুমা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ছোট-বড় পাহাড়-পর্বতের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দুর্গম এলাকা। কেওক্রাডং বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। সবুজ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য, শীতল ঝরনা, আঁকাবাঁকা পথ এবং পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের লুকোচুরি খেলা—এই সবকিছু মিলে মনে নেশা ধরিয়ে দেবে। রুমা থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে মুনলাই বমপাড়া নামে একটি সুন্দর গ্রাম রয়েছে। এই সড়কে বগা লেকের পর দার্জিলিংপাড়া নামে আরও একটি বম নৃগোষ্ঠীর গ্রাম আছে, যেটি দেখার মতো সুন্দর। অনেক পর্যটক যাত্রাবিরতি দিয়ে এই অপূর্ব গ্রামটিতে বিশ্রাম নেন।

নাফাখুম: ‘খুম’ শব্দের অর্থ জলপ্রপাত। নাফাখুম বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম জলপ্রপাত। স্থানীয়রা একে রেমাক্রি জলপ্রপাত নামেও ডাকে। অনেকে একে ‘বাংলার নায়াগ্রা’ বলে থাকেন। সাঙ্গু নদী থেকে নৌকা নিয়ে রেমাক্রি হয়ে নাফাখুমে যেতে হয়। এই যাত্রাপথে তিন্দু, রাজাপাথর এবং পদ্মঝিরিও দেখে নেওয়া যায়। বর্ষাকালে নদীতে স্রোত বেশি থাকায় নাফাখুম যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, শীতকালে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নৌকা চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বর্ষার পর এবং শীতের আগে, অর্থাৎ শরৎকালই নাফাখুম ভ্রমণের সেরা সময়।

প্রান্তিক লেক: বান্দরবান শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের পাশেই এই অপূর্ব লেকটি অবস্থিত। বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে এখানে যেতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

লামা: বান্দরবান শহর থেকে ৯৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থানটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মণ্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মেডিটেশন সেন্টারের জন্য জায়গাটি সুপরিচিত। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে মিকির ও মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটন স্পট এবং সেনাবাহিনী নির্মিত শিশুপার্ক।

নীলগিরি রিসোর্ট: এটি বাংলাদেশের অন্যতম উঁচু পর্বতশৃঙ্গ এবং বান্দরবানের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,০০০ ফুট উঁচুতে এর অবস্থান। নীলগিরির পুরো এলাকা মেঘে ঢাকা থাকায় পর্যটকরা একে ‘মেঘের রাজ্য’ বলেন। এখানকার সূর্যোদয়ের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর এবং কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় প্রায় সব মৌসুমেই এখানে শীতের আমেজ পাওয়া যায়। এই পর্যটন কেন্দ্রটি যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করতে পারে। এখানের মনোরম হেলিপ্যাডটি নীলগিরির অন্যতম আকর্ষণ। পর্যটন এলাকাটির রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

আলী সুড়ঙ্গ: লামা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রহস্যঘেরা এই সুড়ঙ্গে যাওয়ার একমাত্র বাহন চাঁদের গাড়ি। তবে এখানে যাওয়ার আগে পাহাড় ভ্রমণের উপযোগী জুতা, দা, লাঠি, ব্লিচিং পাউডার ও লবণ সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।

নাইক্ষ্যংছড়ি: সীমান্তঘেঁষা এই উপজেলা শহরে রয়েছে জারুলিয়াছড়ি ও নাইক্ষ্যংছড়ি লেক, বিজিবির দপ্তর, উপবন পর্যটন কেন্দ্র এবং ৬৫ হেক্টর জমির ওপর স্থাপিত গয়াল প্রজনন কেন্দ্র।

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স: শহরতলি থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে ৯০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই পর্যটন কমপ্লেক্সটি। এখানকার কৃত্রিম লেক আর পাহাড়ের সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করবে।

চিম্বুক পাহাড়: শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পাহাড়টি বান্দরবানের অন্যতম চিত্তাকর্ষক স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,০০০ ফুট উঁচু এই পাহাড়ের চূড়া থেকে মেঘের সমুদ্র দেখা যায়।

রাজবাড়ি: বান্দরবানে অবস্থিত বহু বছরের পুরোনো বোমাং রাজার বাড়িটি আজও সবাইকে মুগ্ধ করে। প্রতিবছর শীতকালে এখানে রাজপুণ্যাহ মেলা বসে।

শৈলপ্রপাত: বান্দরবান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক সড়কপথে অবস্থিত শৈলপ্রপাতের অবিরাম জলধারা সবাইকে মুগ্ধ করে। এই পর্যটন কেন্দ্রটি দেখার মতো।

বৌদ্ধমন্দির: শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা সড়কের পুলপাড়ায় জাদি পাহাড়ের ওপর অপূর্ব কারুকার্যময় এই মন্দিরটির অবস্থান। আকর্ষণীয় এই স্বর্ণমন্দিরটির নাম বুদ্ধধাতু জাদি। এগুলো ছাড়াও বান্দরবানে দেখার মতো আরও আছে জাদি পাহাড়, রাজবন বিহার, শঙ্খ (সাঙ্গু) নদীসহ অনেক কিছু।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানের উদ্দেশে সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইম্পেরিয়াল, এস. আলম সার্ভিস, ইউনিক বাস সার্ভিস, ডলফিন সার্ভিস, সৌদিয়া পরিবহন এবং শ্যামলী পরিবহনের বাস ছাড়ে। এ ছাড়া যেকোনো বাস বা ট্রেনে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকেও বান্দরবান যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাসগুলো ছাড়ে বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা পরপরই বান্দরবানের উদ্দেশে সাঙ্গু, মারসা, পূর্বাণী, পূরবী এবং পূবালী বাস ছেড়ে যায়। পৌঁছাতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা।

কোথায় থাকবেন
বান্দরবানে থাকার জন্য পর্যটন মোটেল একটি ভালো জায়গা। এখানে এসি ও নন-এসি দুই ধরনের কক্ষই পাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে ইকো সেন্স রিসোর্ট, গিরিরাজ রিসোর্ট, হোটেল গার্ডেন সিটি, হোটেল আরণ্যক, মেঘলা টুরিস্ট রিসোর্ট, হলিডে ইন রিসোর্ট, গ্রিন রিসোর্ট, হিল সাইড রিসোর্ট, হোটেল প্লাজা বান্দরবান, হোটেল পূরবী এবং হোটেল ফোর স্টারসহ আরও অনেক হোটেল ও রিসোর্ট।