মনপুরায় জলদস্যু আতঙ্ক, ক্ষতিতে জেলেরা

মো. কামরুল হোসেন সুমন,মনপুরাঃ
ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় জলদস্যুর আতঙ্কে রাতে মেঘনায় মাছ ধরতে যেতে পারছে না জেলেরা। হামলা চালিয়ে লুটে নেয় জাল-নৌকাসহ সর্বস্ব। অস্ত্রের মুখে অপহৃত জেলেদের কাছ থেকে আদায় করছে মোটা অংকের মুক্তিপণ। নদীতে মাছ ধরতে নৌকা প্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার করে অগ্রিম টাকা দিয়ে জলদস্যুদের কাছ থেকে ‘বিশেষ টোকেন’ সংগ্রহে বাধ্য হচ্ছেন অনেক জেলে। এসব বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে না জানিয়ে গোপন রাখছেন ভুক্তভোগীরা। গত দুই সপ্তাহ ধরে জেলেদের জালে দেখা মিলছে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এতে হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে। কিন্তু দেই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারল না। ডাকাতের ভয়ে অনেক জেলে রাতে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ শিকার করতে যাচ্ছেন না। চিন্তিত জেলে ও মৎস্য আড়ৎদাররা। তবে চাঁদা দিয়ে বিশেষ টেসকেন সংগ্রহ করলেই ডাকাতদের থেকে রক্ষা পান জেলেরা। মাছ ধরতে পারেন। চলতি বছরের ২৭ জুলাই রাতে মনপুরার দক্ষিণে পাতালিয়ার চর ও নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন মেঘনায় মাছ ধরছিল রহমানপুর গ্রামের তিন জেলে গিয়াসউদ্দিন মাঝি, মলিন মাঝি ও রাজিব মাঝির ট্রলার। হঠাৎ করে একদল জলদস্যু তাদের ট্রলারে আক্রমণ করে পরে তাদের অপহরণ করে। লাখ টাকা বিনিময়ে মুক্তিপণে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের। ডাকাতদের কাছে অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা মাঝের ঘাটের জেলে মো. গিয়াস উদ্দিন মাঝি জানান, গত ২৭ জুলাই গভীর রাতে তিনিসহ ১০ জেলে মনপুরা ও হাতিয়া উপজেলার মাঝা-মাঝিতে মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে যান। এ সময় ১৫-২০ জনের একটি ডাকাত দল তাদের ওপর আক্রমণ করে। পিস্তল ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের চারদিক ঘিরে ফেলে। এরপর তাদের ওপর হামলা চালিয়ে মাছ ও জাল লুট করে। পরে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এর সঙ্গে আরও দুই ট্রলারে হামলা করে দুই মাঝিকে তার সঙ্গে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, ডাকাতরা তাদেরকে কোথায় নিয়ে গেছে সেটি তিনিসহ কেউ চিনতে পারেননি। পরে সকালের দিকে তাদের মুক্তির জন্য মুক্তিপণ দাবি করে। তাদের মোবাইল ফোন থেকে ডাকাতরা আড়তদার ও পরিবারের কাছে জনপ্রতি ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর দরদাম করে ডাকাতদের হাত-পা ধরে তিনজন লাখ টাকায় মুক্তি পান। আড়তদার ও পরিবারের সদস্যরা ডাকাতদের মোবাইলে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালে তাকে দুদিন পর রাতে মুক্তি দেয়। জেলেরা জানান, মনপুরার বিভিন্ন এলাকা থেকে গত ছয় মাসে ৫ জেলেকে অপহরণ করে কয়েক লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে জলদস্যু বাহিনী। হামনা করে অনেক ট্রলার থেকে মাছ ও সরঞ্জাম নিয়ে গেছে। হামলা ও অপহরণের ভয়ে রাতে নদীতে মাঝ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। মাছ ধরতে না পেরে দেনা বাড়ছে তাদের। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। জেলেদের দাবি, মেঘনা নদী ও সাগর মোহনায় মাছ শিকার করতে হলে হাতিয়া ডাকাতদের থেকে টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করতে হয় ‘বিশেষ টোকেন। আর টোকেন ছাড়া গেলেই রাতে হামলা, লুটপাট ও জেলে অপহরণের ঘটনা ঘটে। পড়ে মোটা অঙ্কের নিনিময়ে মেলে মুক্তি। বাধ্য হয়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় কেনা এই টোকেন সঙ্গে থাকলে ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে কাজ করবে। রহস্যজনক কারণে এসব বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কাছে প্রকাশ না করে গোপন করছে ভুক্তভোগীরা। সরেজমিনে ভোলার মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে গিয়ে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১০টির বেশি ট্রলারে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে ৫ জেলেকে। পরে ডাকাতদের দাবিকৃত মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছেন ওই জেলেরা। কিন্তু ডাকাতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা জেলে, মাছ, জাল ও সরঞ্জাম। মনপুরা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার জেলে রয়েছেন, যারা নদী ও সাগর এবং সাগর মোহনায় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে ডাকাত আতংক। কখন আবার তাদের ওপর হামলা করে তাদের অপহরণ করে।
এদিকে মনপুরা থানার অফিসার ইন-চার্জ মো আহসান কবির সহ মনপুরা থানা পুলিশের একটি টিম বিভিন্ন মাছ ঘাটে জেলেদের সাথে মতবিনিময় করতে দেখা গেছে এবং জেলেদের সচেতনতার সাথে মাছ শিকার করার পরামর্শ ও ডাকাত নির্মুল সহ সকল সহযোগিতা, বিশেষ অভিযান চলমান রাখবে বলে জানান তিনি।