ঢাকা ০১:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানিকগঞ্জে জিও ব্যাগ ফেলার কাজে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ

আজকের তরুণকণ্ঠ

র্মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর তীররক্ষা প্রকল্পের আওতায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই নেতা হলেন আল-মামুন, যিনি মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং শিবালয় উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) দুপুরে এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা শিবালয় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে আল-মামুনসহ মোট ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে আল-মামুন তার দলবলসহ তেওতা ইউনিয়নের দক্ষিণ তেওতা পাগলপাড়া এলাকায় উপস্থিত হন। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নদীতীরে জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম চলছিল। এ সময় তিনি দাবি করেন, প্রতিটি বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ফেলতে হলে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। স্থানীয়রা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।

এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে আল-মামুন ও তার দল ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে গ্রামবাসী থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।

প্রধান অভিযোগকারী সারোয়ার হোসেন বলেন,“আল-মামুন আমাদের বাড়ির সামনে এসে কাজ করতে চাইলে আমরা জানতে চাই, চাঁদা কেন? তখন সে বলে, ৫০ হাজার টাকা না দিলে জিও ব্যাগ ফেলা হবে না।”

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী তানজিম জানান,“দুজন অপরিচিত ব্যক্তি এসে গালিগালাজ করে এবং কন্ট্রাক্টরের নাম্বার চায়। পরে স্থানীয়রা জড়ো হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। থানা থেকে পুলিশ এসেছিলো।”

এ ঘটনার পর জানা যায়, অভিযুক্ত আল-মামুন স্থানীয় জামায়াত নেতা আফজাল হোসেনের জামাতা। অভিযোগ রয়েছে, তাকে বাঁচাতে শিবালয় উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি আবু তালেব থানায় একাধিকবার তদবির করেছেন।

জামায়াত নেতা আবু তালেব দাবি করেন,“এটা সামাজিক বিরোধ। চাঁদার কোনো বিষয় ছিল না। আমি শুধু সন্ধ্যায় গিয়ে বসে শুনতে চেয়েছি।”

তবে প্রশ্ন উঠেছে—একজন আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ নেওয়া জামায়াত নেতার রাজনৈতিক অবস্থান ও দলীয় নীতির সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? আবু তালেব বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন,“আল-মামুন আওয়ামী লীগের কেউ না। কারো সাথে থাকা মানেই সেই দলের লোক হওয়া নয়।”

স্থানীয় আবুল হাসান বলেন,“পতিত আওয়ামী সরকারের দালালরা এখনো গ্রামে সক্রিয়। জামায়াত নেতাদের কেউ কেউ এসব চাঁদাবাজদের প্রটেকশন দেয়।”

একজন বয়োজ্যেষ্ঠ গ্রামবাসী জানান,“থানা থেকেই বলা হয়েছে, একজন জামায়াত নেতা মামলা না নিতে চাপ দিচ্ছেন। আমরা বিস্মিত।”

অন্যদিকে স্থানীয় যুবক জুবায়ের হোসেন বলেন,“চাঁদা চাইতে এলে আমরা বাধা দিই। পরে তারা আমাদের ঘেরাও করে। আমরা এখন মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন,“অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

উল্লেখযোগ্য যে, এর আগেও উপজেলা জামায়াত নেতা আবু তালেব এক আওয়ামী লীগ নেতাকে নাশকতা মামলায় রক্ষা করতে থানায় চাপ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে।

এলাকার রাজনৈতিক অসাধু চক্র ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে সচেতন মহল।

Tag :

পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

প্রকাশ : ০৩:৫৩:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

মানিকগঞ্জে জিও ব্যাগ ফেলার কাজে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ

প্রকাশ : ০৩:৫৩:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

র্মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর তীররক্ষা প্রকল্পের আওতায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই নেতা হলেন আল-মামুন, যিনি মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং শিবালয় উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) দুপুরে এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা শিবালয় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে আল-মামুনসহ মোট ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে আল-মামুন তার দলবলসহ তেওতা ইউনিয়নের দক্ষিণ তেওতা পাগলপাড়া এলাকায় উপস্থিত হন। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নদীতীরে জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম চলছিল। এ সময় তিনি দাবি করেন, প্রতিটি বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ফেলতে হলে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। স্থানীয়রা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।

এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে আল-মামুন ও তার দল ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে গ্রামবাসী থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।

প্রধান অভিযোগকারী সারোয়ার হোসেন বলেন,“আল-মামুন আমাদের বাড়ির সামনে এসে কাজ করতে চাইলে আমরা জানতে চাই, চাঁদা কেন? তখন সে বলে, ৫০ হাজার টাকা না দিলে জিও ব্যাগ ফেলা হবে না।”

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী তানজিম জানান,“দুজন অপরিচিত ব্যক্তি এসে গালিগালাজ করে এবং কন্ট্রাক্টরের নাম্বার চায়। পরে স্থানীয়রা জড়ো হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। থানা থেকে পুলিশ এসেছিলো।”

এ ঘটনার পর জানা যায়, অভিযুক্ত আল-মামুন স্থানীয় জামায়াত নেতা আফজাল হোসেনের জামাতা। অভিযোগ রয়েছে, তাকে বাঁচাতে শিবালয় উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি আবু তালেব থানায় একাধিকবার তদবির করেছেন।

জামায়াত নেতা আবু তালেব দাবি করেন,“এটা সামাজিক বিরোধ। চাঁদার কোনো বিষয় ছিল না। আমি শুধু সন্ধ্যায় গিয়ে বসে শুনতে চেয়েছি।”

তবে প্রশ্ন উঠেছে—একজন আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ নেওয়া জামায়াত নেতার রাজনৈতিক অবস্থান ও দলীয় নীতির সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? আবু তালেব বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন,“আল-মামুন আওয়ামী লীগের কেউ না। কারো সাথে থাকা মানেই সেই দলের লোক হওয়া নয়।”

স্থানীয় আবুল হাসান বলেন,“পতিত আওয়ামী সরকারের দালালরা এখনো গ্রামে সক্রিয়। জামায়াত নেতাদের কেউ কেউ এসব চাঁদাবাজদের প্রটেকশন দেয়।”

একজন বয়োজ্যেষ্ঠ গ্রামবাসী জানান,“থানা থেকেই বলা হয়েছে, একজন জামায়াত নেতা মামলা না নিতে চাপ দিচ্ছেন। আমরা বিস্মিত।”

অন্যদিকে স্থানীয় যুবক জুবায়ের হোসেন বলেন,“চাঁদা চাইতে এলে আমরা বাধা দিই। পরে তারা আমাদের ঘেরাও করে। আমরা এখন মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন,“অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

উল্লেখযোগ্য যে, এর আগেও উপজেলা জামায়াত নেতা আবু তালেব এক আওয়ামী লীগ নেতাকে নাশকতা মামলায় রক্ষা করতে থানায় চাপ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে।

এলাকার রাজনৈতিক অসাধু চক্র ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে সচেতন মহল।