ঢাকা ০৬:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধ, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অপহরণের অভিযোগ

আজকের তরুণকণ্ঠ

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ:

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এক যুবকের বিরুদ্ধে অপহরণের নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠেছে। নিখোঁজ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর ওই যুবক নিজেই বাড়ি ফিরে এসে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানা গেছে।

এর প্রেক্ষিতে, রাসেলের অপহরণ মামলার আসামি আসমা আক্তার বাদী হয়ে রাসেল (২৩), আলাউদ্দিন ওরফে আলাতন (৬৫), আবু তাহের (৪০), আইয়ুব আলী (৪২) ও মমতাজ বেগমের (৫৫) বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তরা সবাই আসমা আক্তারের স্বামী নায়েব আলীর আত্মীয়-স্বজন।

থানার অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। এর জেরে আসমা আক্তার আদালতে একটি মোকদ্দমা দায়ের করেন। মামলার সংবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে বিবাদীরা তাকে মারপিট করতে উদ্যত হয় এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। পরে তিনি আদালতে ৭ ধারায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন।

আসমা আক্তারের অভিযোগ, আদালতে মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষরা তাকে ও তার পরিবারকে ফাঁসাতে এবং বেকায়দায় ফেলতে ১৭ জুলাই রাসেলের অপহরণের নাটক সাজায়। পরদিন রাসেল কারো সাহায্য ছাড়াই নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। মূলত জমিজমার বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং তাদের হয়রানি করার জন্যই এই মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অপহরণের নাটক সাজানো হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আনছার আলী, পল্লী চিকিৎসক আব্দুল হালিম ও দোকানদার মো. দুলালসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘটনাটি তারা শুনেছেন। উভয় পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে পুরনো বিরোধ রয়েছে। হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া এবং পরদিন একাই ফিরে আসার কারণে অপহরণের ঘটনাটি তাদের কাছে মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ফাঁসানোর জন্যই এই নাটক হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

অভিযোগকারী আসমা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। আমি তিন সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িতে থাকি। বাড়ির একটি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আদালতে মামলা চলছে। আমাদের ফাঁসাতে ও মামলার গতি ভিন্ন খাতে নিতেই রাসেল এই নাটক করেছে।”

তবে অভিযুক্ত রাসেল (২৩) দাবি করেন, “আমি নায়েব আলীর ভাই আয়েব আলীর কাছ থেকে জমি কিনেছি। কিন্তু তারা সেই জমি দখলে না দিয়ে নানা সময়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল। ১৭ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে বটতলা থেকে পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন আমাকে একটি প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায়। আমার পরিবার থানায় জিডি করলে অপহরণকারীরা আমাকে ঢাকার শিশু মেলার কাছে ফেলে রেখে যায়। এরপর আমি থানায় আসি। প্রতিপক্ষরাই ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে আমাকে অপহরণ করিয়েছে।”

এ ব্যাপারে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে. ও. এম. তৌফিক আজম বলেন, “রাসেল নামের এক যুবকের অপহরণের বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে রাসেল পরদিন একাই ফিরে আসায়, অভিযুক্ত আসমা আক্তারও একটি পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন। উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল খালেককে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Tag :

পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

প্রকাশ : ০৯:২৬:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

সিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধ, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অপহরণের অভিযোগ

প্রকাশ : ০৯:২৬:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ:

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এক যুবকের বিরুদ্ধে অপহরণের নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠেছে। নিখোঁজ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর ওই যুবক নিজেই বাড়ি ফিরে এসে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানা গেছে।

এর প্রেক্ষিতে, রাসেলের অপহরণ মামলার আসামি আসমা আক্তার বাদী হয়ে রাসেল (২৩), আলাউদ্দিন ওরফে আলাতন (৬৫), আবু তাহের (৪০), আইয়ুব আলী (৪২) ও মমতাজ বেগমের (৫৫) বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তরা সবাই আসমা আক্তারের স্বামী নায়েব আলীর আত্মীয়-স্বজন।

থানার অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। এর জেরে আসমা আক্তার আদালতে একটি মোকদ্দমা দায়ের করেন। মামলার সংবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে বিবাদীরা তাকে মারপিট করতে উদ্যত হয় এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। পরে তিনি আদালতে ৭ ধারায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন।

আসমা আক্তারের অভিযোগ, আদালতে মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষরা তাকে ও তার পরিবারকে ফাঁসাতে এবং বেকায়দায় ফেলতে ১৭ জুলাই রাসেলের অপহরণের নাটক সাজায়। পরদিন রাসেল কারো সাহায্য ছাড়াই নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। মূলত জমিজমার বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং তাদের হয়রানি করার জন্যই এই মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অপহরণের নাটক সাজানো হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আনছার আলী, পল্লী চিকিৎসক আব্দুল হালিম ও দোকানদার মো. দুলালসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘটনাটি তারা শুনেছেন। উভয় পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে পুরনো বিরোধ রয়েছে। হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া এবং পরদিন একাই ফিরে আসার কারণে অপহরণের ঘটনাটি তাদের কাছে মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ফাঁসানোর জন্যই এই নাটক হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

অভিযোগকারী আসমা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। আমি তিন সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িতে থাকি। বাড়ির একটি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আদালতে মামলা চলছে। আমাদের ফাঁসাতে ও মামলার গতি ভিন্ন খাতে নিতেই রাসেল এই নাটক করেছে।”

তবে অভিযুক্ত রাসেল (২৩) দাবি করেন, “আমি নায়েব আলীর ভাই আয়েব আলীর কাছ থেকে জমি কিনেছি। কিন্তু তারা সেই জমি দখলে না দিয়ে নানা সময়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল। ১৭ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে বটতলা থেকে পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন আমাকে একটি প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায়। আমার পরিবার থানায় জিডি করলে অপহরণকারীরা আমাকে ঢাকার শিশু মেলার কাছে ফেলে রেখে যায়। এরপর আমি থানায় আসি। প্রতিপক্ষরাই ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে আমাকে অপহরণ করিয়েছে।”

এ ব্যাপারে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে. ও. এম. তৌফিক আজম বলেন, “রাসেল নামের এক যুবকের অপহরণের বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে রাসেল পরদিন একাই ফিরে আসায়, অভিযুক্ত আসমা আক্তারও একটি পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন। উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল খালেককে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”