ইলিশের জন্য মেঘনার পাড়ে দোয়া-মোনাজাত

ভরা মৌসুমের তিন মাস কেটে গেলেও নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। বর্ষায় ইলিশ বাড়ার পরিবর্তে এবার কমতে শুরু করেছে। ফলে ইলিশের চরম আকাল চলছে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভোলার দুই লক্ষাধিক জেলে। তাই পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে এবং নদীতে ইলিশ চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া-মোনাজাত করেছেন তাঁরা। এ উপলক্ষে মেঘনার পাড়ে কোরআন তিলাওয়াতেরও আয়োজন করা হয়।
রোববার বিকেল তিনটায় ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঘাটে এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে স্থানীয় মসজিদে ইমাম ও আলেমদের নিয়ে দোয়া ইউনুসের খতমেরও আয়োজন ছিল। খতম শেষে বিকেল তিনটায় বৃষ্টির মধ্যেই ইলিশ চেয়ে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়, যাতে অংশ নেন কয়েকশ জেলে।
মোনাজাত পরিচালনা করেন ভোলার বোরহানউদ্দিনের বাটামারা দরবারের পীর সাহেব মাওলানা মো. মুহিববুল্লাহ। জেলেদের পাশাপাশি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও এতে শরিক হন।
আয়োজকদের একজন, মাছ ব্যবসায়ী মো. মিরন বলেন, “সাধারণত বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। সেই হিসাবে মৌসুমের তিন মাস চলে গেলেও মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা নেই। জেলেরা জাল-ট্রলার নিয়ে নদীতে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। মাঝেমধ্যে দু-একটি ইলিশ পেলেও তা বিক্রি করে ট্রলারের তেলের খরচও ওঠে না।”
তিনি আরও বলেন, “জেলেরা ধারদেনা করতে করতে এখন নিঃস্ব। শেষ ভরসা হিসেবে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেই এই দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। আশা করি, আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করে নদীতে ইলিশ দেবেন এবং জেলে পরিবারগুলোতে আবার সচ্ছলতা ফিরে আসবে।”
মো. লাবলু নামের একজন জেলে জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। তাঁর নৌকায় আরও ১০ জন জেলে কাজ করেন। একবার নদীতে গেলে তাঁদের ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি বলেন, “তিন দিন আগে নদীতে গিয়ে মাত্র তিনটি ইলিশ পেয়েছিলাম, যা ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। খরচ বাদ দিয়ে আমরা প্রত্যেকে ভাগে মাত্র ১০০ টাকা করে পেয়েছি। ভরা মৌসুমে ইলিশ বাড়ার বদলে উল্টো কমে গেছে। বছরের অন্য সময়ের চেয়েও এখন ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে।”
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের বিচরণের মৌসুমেরও পরিবর্তন হয়েছে।এ ছাড়া, নদীতে ডুবোচরের কারণে পানি ঘোলা থাকায় ইলিশ আসছে না। তবে আগামী পূর্ণিমায় নদীর পানির ঘোলাভাব কিছুটা কমলে মেঘনাতেও ইলিশ ধরা পড়বে বলে আমরা আশাবাদী।”