ঢাকা ১১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বর্ষায় তাকের বইগুলো আর্দ্রতা থেকে বাঁচানোর সহজ উপায়

আজকের তরুণকণ্ঠ

বাংলাদেশের বর্ষাকাল মানেই কাদাপানি, স্যাঁতসেঁতে ঘর, আর এক ধরনের ভারী ভ্যাপসা গন্ধ। বিশেষ করে একটু পুরোনো দালানে শুধু জামা-কাপড় বা ঘরের দেয়ালই নয়, বর্ষার আর্দ্রতা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে ঘরের বইয়ের তাকে।

পুরোনো বইগুলোতে এক ধরনের সোঁদা গন্ধ হয়, পাতাগুলো ঢেউ খেলানো হয়ে যায়, এমনকি কিছু বই পোকায় ধরে বা ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। বর্ষার এই আর্দ্রতা থেকে বইগুলো বাঁচাতে হলে প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন ও সচেতনতা।

কেন এই সমস্যা হয়?

বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৮০ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত আর্দ্রতা কাগজের শত্রু। কাগজ প্রকৃতিগতভাবে আর্দ্রতা শোষণ করে, ফলে পাতাগুলো ফুলে ওঠে এবং কোণাগুলো কুঁচকে যায়। আর্দ্র পরিবেশ ছত্রাক জন্মানোর আদর্শ জায়গা, ফলে পাতায় দাগ পড়ে এবং একসময় তা পচেও যেতে পারে। যদি তাকের আশেপাশে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল না করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

কী ধরনের ক্ষতি হয়?

  • বইয়ের কাগজ ঢেউ খেলানো বা নরম হয়ে যায়।

  • পাতায় বাদামি দাগ পড়ে ও ছত্রাক জন্মায়।

  • বইয়ের মলাট আলগা হয়ে যেতে পারে।

  • পাতায় পোকা ধরে বা পাতা খেয়ে ফেলে।

  • বই থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে, যা শ্বাসতন্ত্রের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।

যেভাবে বাঁচাবেন শখের বইগুলো

১. শুকনো ও বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখুন
বইয়ের তাক এমন ঘরে রাখুন যেখানে বাতাস প্রবাহ ভালো থাকে। জানালার পাশে না রেখে, খোলামেলা ও আলো-বাতাসে পূর্ণ জায়গা নির্বাচন করুন। প্রয়োজনে ছোট ফ্যান বা ভেন্টিলেশন ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন।

২. সিলিকা জেল বা কাঠকয়লার ব্যবহার
তাকের কোণে কয়েকটি ছোট প্যাকেটে সিলিকা জেল রাখলে তা আর্দ্রতা শোষণ করে। এটি একধরনের আর্দ্রতা-নিরোধক উপাদান। সিলিকা জেল না পেলে, ছোট পাত্রে কাঠকয়লা রেখে দিলেও একই কাজ হবে।

৩. গায়ে গায়ে লাগিয়ে বই রাখবেন না
বইগুলো এমনভাবে রাখুন যেন প্রতিটির মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে। এতে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং আর্দ্রতা জমে থাকে না। বই একটির সঙ্গে আরেকটি চেপে থাকলে ছত্রাক দ্রুত ছড়ায়।

৪. মাঝে মাঝে বই রোদে দিন
বর্ষাকালে মাঝে মাঝে রোদ ওঠে। এমন দিনগুলোতে বইগুলোকে এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য ছায়াযুক্ত হালকা রোদে রেখে দিন। সরাসরি কড়া রোদে না দিয়ে, আলোযুক্ত শুকনো ঘরে খোলা অবস্থায় রাখলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।

৫. তাক নিয়মিত পরিষ্কার করুন
তাকের ধুলাবালি জমতে দেবেন না। বইয়ের তাক নিয়মিত শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। প্রয়োজনে পাতলা অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণে সামান্য ভেজানো কাপড় দিয়েও মুছতে পারেন, তবে বই যেন ভিজে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

৬. কীটনাশক সাবধানে ব্যবহার করুন
বইয়ের পোকা প্রতিরোধে কিছু শুকনো নিমপাতা বা কর্পূর ব্যবহার করতে পারেন। তবে কীটনাশক পাউডার বা স্প্রে সরাসরি বইয়ের ওপর ব্যবহার করা উচিত নয়; বরং তাকের এক কোণায় আলাদা ছোট পাত্রে রেখে দিন।

৭. দুর্লভ বা প্রিয় বইগুলো প্লাস্টিক কভারে মুড়ে রাখুন
বই শুধু জ্ঞান নয়, অনেক সময় আবেগ ও স্মৃতির মূর্ত প্রতীক। একটি পুরোনো বইয়ের পাতায় থাকতে পারে বাবা-মায়ের হাতের লেখা কিংবা ভালোবাসার কোনো স্মৃতি। তাই বর্ষার মতো প্রতিকূল আবহাওয়ায় বইকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজন একটু বাড়তি সচেতনতা ও যত্ন।

(সূত্র: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, ন্যাশনাল লাইব্রেরি প্রিজারভেশন অফিস ইউএসএ, হার্ভার্ড লাইব্রেরি প্রিজারভেশন সেন্টার, আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন গাইডলাইনস অন বুক স্টোরেজ।)

Tag :

পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

প্রকাশ : ১০:১৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫

বর্ষায় তাকের বইগুলো আর্দ্রতা থেকে বাঁচানোর সহজ উপায়

প্রকাশ : ১০:১৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের বর্ষাকাল মানেই কাদাপানি, স্যাঁতসেঁতে ঘর, আর এক ধরনের ভারী ভ্যাপসা গন্ধ। বিশেষ করে একটু পুরোনো দালানে শুধু জামা-কাপড় বা ঘরের দেয়ালই নয়, বর্ষার আর্দ্রতা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে ঘরের বইয়ের তাকে।

পুরোনো বইগুলোতে এক ধরনের সোঁদা গন্ধ হয়, পাতাগুলো ঢেউ খেলানো হয়ে যায়, এমনকি কিছু বই পোকায় ধরে বা ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। বর্ষার এই আর্দ্রতা থেকে বইগুলো বাঁচাতে হলে প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন ও সচেতনতা।

কেন এই সমস্যা হয়?

বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৮০ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত আর্দ্রতা কাগজের শত্রু। কাগজ প্রকৃতিগতভাবে আর্দ্রতা শোষণ করে, ফলে পাতাগুলো ফুলে ওঠে এবং কোণাগুলো কুঁচকে যায়। আর্দ্র পরিবেশ ছত্রাক জন্মানোর আদর্শ জায়গা, ফলে পাতায় দাগ পড়ে এবং একসময় তা পচেও যেতে পারে। যদি তাকের আশেপাশে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল না করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

কী ধরনের ক্ষতি হয়?

  • বইয়ের কাগজ ঢেউ খেলানো বা নরম হয়ে যায়।

  • পাতায় বাদামি দাগ পড়ে ও ছত্রাক জন্মায়।

  • বইয়ের মলাট আলগা হয়ে যেতে পারে।

  • পাতায় পোকা ধরে বা পাতা খেয়ে ফেলে।

  • বই থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে, যা শ্বাসতন্ত্রের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।

যেভাবে বাঁচাবেন শখের বইগুলো

১. শুকনো ও বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখুন
বইয়ের তাক এমন ঘরে রাখুন যেখানে বাতাস প্রবাহ ভালো থাকে। জানালার পাশে না রেখে, খোলামেলা ও আলো-বাতাসে পূর্ণ জায়গা নির্বাচন করুন। প্রয়োজনে ছোট ফ্যান বা ভেন্টিলেশন ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন।

২. সিলিকা জেল বা কাঠকয়লার ব্যবহার
তাকের কোণে কয়েকটি ছোট প্যাকেটে সিলিকা জেল রাখলে তা আর্দ্রতা শোষণ করে। এটি একধরনের আর্দ্রতা-নিরোধক উপাদান। সিলিকা জেল না পেলে, ছোট পাত্রে কাঠকয়লা রেখে দিলেও একই কাজ হবে।

৩. গায়ে গায়ে লাগিয়ে বই রাখবেন না
বইগুলো এমনভাবে রাখুন যেন প্রতিটির মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে। এতে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং আর্দ্রতা জমে থাকে না। বই একটির সঙ্গে আরেকটি চেপে থাকলে ছত্রাক দ্রুত ছড়ায়।

৪. মাঝে মাঝে বই রোদে দিন
বর্ষাকালে মাঝে মাঝে রোদ ওঠে। এমন দিনগুলোতে বইগুলোকে এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য ছায়াযুক্ত হালকা রোদে রেখে দিন। সরাসরি কড়া রোদে না দিয়ে, আলোযুক্ত শুকনো ঘরে খোলা অবস্থায় রাখলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।

৫. তাক নিয়মিত পরিষ্কার করুন
তাকের ধুলাবালি জমতে দেবেন না। বইয়ের তাক নিয়মিত শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। প্রয়োজনে পাতলা অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণে সামান্য ভেজানো কাপড় দিয়েও মুছতে পারেন, তবে বই যেন ভিজে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

৬. কীটনাশক সাবধানে ব্যবহার করুন
বইয়ের পোকা প্রতিরোধে কিছু শুকনো নিমপাতা বা কর্পূর ব্যবহার করতে পারেন। তবে কীটনাশক পাউডার বা স্প্রে সরাসরি বইয়ের ওপর ব্যবহার করা উচিত নয়; বরং তাকের এক কোণায় আলাদা ছোট পাত্রে রেখে দিন।

৭. দুর্লভ বা প্রিয় বইগুলো প্লাস্টিক কভারে মুড়ে রাখুন
বই শুধু জ্ঞান নয়, অনেক সময় আবেগ ও স্মৃতির মূর্ত প্রতীক। একটি পুরোনো বইয়ের পাতায় থাকতে পারে বাবা-মায়ের হাতের লেখা কিংবা ভালোবাসার কোনো স্মৃতি। তাই বর্ষার মতো প্রতিকূল আবহাওয়ায় বইকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজন একটু বাড়তি সচেতনতা ও যত্ন।

(সূত্র: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, ন্যাশনাল লাইব্রেরি প্রিজারভেশন অফিস ইউএসএ, হার্ভার্ড লাইব্রেরি প্রিজারভেশন সেন্টার, আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন গাইডলাইনস অন বুক স্টোরেজ।)