মানিকগঞ্জের সিংগাইরে অগ্রণী ব্যাংকের আদলে ‘অগ্রণী এজেন্ট লিমিটেড’ নামে ভুয়া এনজিও খুলে চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্ট পরিচয় দিয়ে প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের হাতে আটক দুই কর্মচারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের জায়গীর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, মাত্র দুই মাস আগে প্রতারক চক্রটি জায়গীর বাজারের পূর্বপাশে অফিস খোলে। তারা নিজেদের অগ্রণী ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্ট ব্যাংক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখাত। সঞ্চয় ও ঋণের সুযোগ দেখিয়ে এলাকার বহু মানুষের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নেয়। অনেকে নিরাপদ ভেবে বছরের পর বছর জমানো সঞ্চয়ও সেখানে জমা রাখেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতারকরা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে মানুষের সরলতাকে কাজে লাগাচ্ছিল। এতে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। মানুষের আস্থা ভেঙে দেওয়ার এমন ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এই প্রতারক চক্রের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মর্জিনা নামে এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“আমি তিন মাসের জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। আজ এসে দেখি কেউ নেই। আমি গরিব মানুষ। অল্প অল্প করে জমানো আমার সব সঞ্চয় শেষ হয়ে গেল। আমি আমার টাকা ফেরত চাই, আর এই প্রতারকদের কঠিন শাস্তি চাই।”

একই অভিযোগ করেছেন মো. মাসুদ রানা, আবদুস সামাদ, ইশার আলী, রুবিয়া, আনেছা, সফিজুদ্দি, মাজেদা, দিলরুবা, তাছলিমা, চায়না, রুকসানা, সালেহা, হাবিবা ও আলমগীরসহ আরও অনেকে। তারা জানান, প্রতারকরা তিন লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার শর্তে আগাম ২৪ হাজার টাকা করে সঞ্চয় নিয়েছিল। ৮ সেপ্টেম্বর ঋণ বিতরণের কথা ছিল, কিন্তু অফিসে গিয়ে দেখেন মালিকপক্ষ উধাও।

এতে গ্রাহকরা উত্তেজিত হয়ে প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী মাহমুদুল হাসান ও জান্নাতুল নামে দুজনকে অবরুদ্ধ করেন। মুহূর্তেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

অগ্রণী ব্যাংকের বাস্তা শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, “অগ্রণী এজেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি অগ্রণী ব্যাংকের কোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান নয়।”

অগ্রণী এজেন্ট লিমিটেডের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. ওমর আলীর মোবাইলে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেন এবং পরবর্তীতে মোবাইল বন্ধ করে দেন।

সিংগাইর থানার ওসি জেওএম তৌফিক আজম বলেন,
“অবরুদ্ধ দু’জনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। প্রতারণার অভিযোগে ৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আটককৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।”