ঢাকা ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিংগাইরে বিএনপি নেতা সেলিম বহিষ্কার; জানেন না উপজেলা সভাপতি

আজকের তরুণকণ্ঠ

সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির সদস্য সেলিম হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও অসংলগ্ন বক্তব্য প্রদান এবং দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শরিফ খোকন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। তবে এই বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবিদুর রহমান খান রোমান।

দলীয় সূত্র ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিম হোসেন তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার সৈয়দ আবু সুফিয়ানের কাছে ১৪ কোটি টাকা পান। এই টাকা নিয়ে একটি সালিশি বৈঠক হয়। সালিশে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান মিঠু আবু সুফিয়ানের পক্ষে ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও রাজনৈতিকভাবেও তারা দুজন দুটি ভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব কারণ ছাড়াও ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল।

সেলিম হোসেন জানান, সম্প্রতি পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার সৈয়দ আবু সুফিয়ানের সঙ্গে ঝামেলা হয়। এই ঘটনায় আবু সুফিয়ান তাঁর ছেলেসহ সেলিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করেন। সেলিম হোসেনের অভিযোগ, এই মামলা হওয়ার পেছনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে.ও.এম তৌফিক আজমের হাত রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি ওসির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি), ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার এবং মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমেও কথা বলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ওসিকে রক্ষা করতে দলের সভাপতিকে না জানিয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান মিঠুর একক সিদ্ধান্তে অবৈধভাবে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বহিষ্কারাদেশ তিনি মানেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবিদুর রহমান খান রোমান বলেন, সেলিমকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে কখনো আলোচনা হয়নি। তাছাড়া সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহাববুর রহমান মিঠুও তাঁকে কিছু জানাননি। বহিষ্কারের পর দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তাঁর ধারণা, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান মিঠু ব্যক্তিগত আক্রোশে তাঁর একক সিদ্ধান্তে সেলিমকে বহিষ্কার করেছেন।

অন্যদিকে, সেলিমকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়াকে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন ও ব্যক্তিগত আক্রোশজনিত বলে জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্ত।

তিনি বলেন, কাউকে বহিষ্কার করতে হলে অপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে দলীয় ফোরামের আলোচনা করে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেলিমের বহিষ্কারের ক্ষেত্রে এর কিছুই মানা হয়নি। এছাড়াও সভাপতিকে না জানিয়ে এ ধরনের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। মনগড়া অসাংগঠনিক কার্যকলাপের কারণে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

Tag :

পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

প্রকাশ : ০৯:২৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সিংগাইরে বিএনপি নেতা সেলিম বহিষ্কার; জানেন না উপজেলা সভাপতি

প্রকাশ : ০৯:২৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির সদস্য সেলিম হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও অসংলগ্ন বক্তব্য প্রদান এবং দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শরিফ খোকন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। তবে এই বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবিদুর রহমান খান রোমান।

দলীয় সূত্র ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিম হোসেন তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার সৈয়দ আবু সুফিয়ানের কাছে ১৪ কোটি টাকা পান। এই টাকা নিয়ে একটি সালিশি বৈঠক হয়। সালিশে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান মিঠু আবু সুফিয়ানের পক্ষে ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও রাজনৈতিকভাবেও তারা দুজন দুটি ভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব কারণ ছাড়াও ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল।

সেলিম হোসেন জানান, সম্প্রতি পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার সৈয়দ আবু সুফিয়ানের সঙ্গে ঝামেলা হয়। এই ঘটনায় আবু সুফিয়ান তাঁর ছেলেসহ সেলিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করেন। সেলিম হোসেনের অভিযোগ, এই মামলা হওয়ার পেছনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে.ও.এম তৌফিক আজমের হাত রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি ওসির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি), ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার এবং মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমেও কথা বলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ওসিকে রক্ষা করতে দলের সভাপতিকে না জানিয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান মিঠুর একক সিদ্ধান্তে অবৈধভাবে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বহিষ্কারাদেশ তিনি মানেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবিদুর রহমান খান রোমান বলেন, সেলিমকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে কখনো আলোচনা হয়নি। তাছাড়া সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহাববুর রহমান মিঠুও তাঁকে কিছু জানাননি। বহিষ্কারের পর দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তাঁর ধারণা, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান মিঠু ব্যক্তিগত আক্রোশে তাঁর একক সিদ্ধান্তে সেলিমকে বহিষ্কার করেছেন।

অন্যদিকে, সেলিমকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়াকে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন ও ব্যক্তিগত আক্রোশজনিত বলে জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্ত।

তিনি বলেন, কাউকে বহিষ্কার করতে হলে অপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে দলীয় ফোরামের আলোচনা করে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেলিমের বহিষ্কারের ক্ষেত্রে এর কিছুই মানা হয়নি। এছাড়াও সভাপতিকে না জানিয়ে এ ধরনের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। মনগড়া অসাংগঠনিক কার্যকলাপের কারণে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।