চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি জালিয়াতির একটি নতুন কৌশল উদঘাটিত হয়েছে, যেখানে দুটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৬ টন সিগারেট পেপারকে 'পেপার রিবন' এবং 'স্ট্র পেপার' হিসেবে ঘোষণা দিয়ে খালাসের চেষ্টা করে। এই জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান দুটি প্রায় ১৩৭ কোটি টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে জানা গেছে।

ভ্যাট কর্মকর্তাদের মতে, যদি এই কাঁচামাল বৈধভাবে আমদানি করা হতো এবং সিগারেট উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করা হতো, তবে সরকার প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করতে পারত। প্রতি বছরই বিভিন্ন পণ্য এবং অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বড় অঙ্কের শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, যার পেছনে প্রভাবশালী চক্র জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার আরএম এন্টারপ্রাইজ জুলাই মাসের মাঝামাঝি হংকং থেকে 'স্ট্র পেপার' ঘোষণা দিয়ে ১৬ টনের একটি চালান আমদানি করে। মাসের শেষের দিকে, স্মার্ট মুভ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান 'রিবন পেপার' ঘোষণা দিয়ে প্রায় ১০ টনের একটি চালান নিয়ে আসে।

চালান দুটি নিয়ে সন্দেহ হলে পণ্যের নমুনা বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পণ্যগুলো আসলে সিগারেট পেপার।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও আমদানিকারকরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করে চালানগুলো খালাসের চেষ্টা করে। চালান দুটি খালাস করা হলে সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হতো। আরএম এন্টারপ্রাইজের ১৬ টনের চালান থেকে সরকার প্রায় ৮৫ কোটি টাকা এবং স্মার্ট মুভের চালান থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ভ্যাট হারাতো।

এদিকে, আরএম এন্টারপ্রাইজ ও স্মার্ট মুভ চালানের বিপরীতে যে ঠিকানা ব্যবহার করেছিল, কাস্টমসের তদন্তে তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, আরএম এন্টারপ্রাইজ এর আগেও আটটি চালানে প্রায় ৪৮৯ টন সিগারেটের কাঁচামাল আমদানি করেছিল, যার মূল্য ছিল প্রায় ২৭ কোটি ৯ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জব্দ করা পণ্যগুলো ঘোষিত নামে খালাস করা সম্ভব নয়। পণ্যগুলো খালাস করতে হলে সিগারেট পেপারের জন্য প্রযোজ্য শুল্ক এবং মিথ্যা ঘোষণার জন্য জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোর আগের আমদানি ও বিক্রির হিসাব যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট অফিসকে অনুরোধ করা হবে।