নিজস্ব প্রতিবেদক, মানিকগঞ্জ:
মাত্র পাঁচ মাস আগে উদ্বোধন হওয়া মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নবনির্মিত ভবনে ভয়াবহ নির্মাণ ত্রুটি ধরা পড়েছে। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। শুধু তাই নয়, সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ছে, যা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, দলিল লেখক এবং সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে অত্যাধুনিক এই ভবনটি ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে ভবনের ছাদ ও দেয়াল চুঁইয়ে পানি পড়ে অফিসের মোহরার কক্ষ এবং রেকর্ডরুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্লাবিত হয়ে যায়। সাব-রেজিস্ট্রার ও সহকারী কর্মকর্তার কক্ষেও বড় ফাটল দেখা দেওয়ায় যে কোনো মুহূর্তে ভবন ধসের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সিংগাইর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে প্রায় ১৫০ জন দলিল লেখক ও ৫০ জন নকলনবিশ কর্মরত। ভবনের এমন নিম্নমানের কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জয়া কনস্ট্রাকশন’-কে সরাসরি দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।
সেবা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, "সরকারের ৪ কোটি টাকা খরচের একটি নতুন ভবন থেকে এভাবে পানি পড়বে আর দেয়ালে ফাটল ধরবে, এটা অকল্পনীয়।"
জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আউয়াল শরীফ খোকন বলেন, "ধারণা করছি, ভবনটি ব্লক ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এবং সঠিকভাবে কিউরিং (পানি দিয়ে ভেজানো) করা হয়নি। এ কারণেই হয়তো এই দশা। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।"
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, "ভবনটি হস্তান্তরের সময় এই ত্রুটিগুলো চোখে পড়েনি। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয়া কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করে দেবে বলে জানিয়েছে।"
জয়া কনস্ট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. রবিন সরকার "এক সপ্তাহের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান করা হবে" বলে আশ্বাস দিলেও প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. জুবায়ের রহমান বলেন, "সলিড ব্রিকস ব্যবহারের কারণে কিছু সমস্যা হয়েছে। বৃষ্টি কমলে আমাকে একটু সময় দিন, সব ঠিক করে দেবো।"
এদিকে, খোদ সাব-রেজিস্ট্রার মো. মামুন বাবর নির্মাণকাজে তদারকির অভাবকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, "ছাদ দিয়ে পানি পড়ছে, দেয়ালে ফাটল ধরেছে, এমনকি ভবনের নিচ থেকে বালুও সরে যাচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নির্মাণের সময় তদারকির চরম অভাব ছিল এবং ভবনটি হস্তান্তরের পর সংশ্লিষ্টরা আর কোনো খোঁজ নেয়নি।"
তবে আশ্চর্যজনকভাবে, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন জেলা রেজিস্ট্রার মো. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, "আমি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।"
মেবাইল: 01715341442,01887911655 ই-মেইল: newstarunkantha@gmail.com
ajkertarunkantha.com